কথাকথনের মধ্যে আমি হঠাৎ তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনার শিক্ষাগত মান কত ? উত্তরে তিনি বলেন আমি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছি। এই কথা বলতেই তার চোখে জল এসে গেল। মুহূর্তেই তিনি স্মৃতির ইতিহাসে ফিরে যান। আর বলেন আমি তখন অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র,বাবা দিনমজুরের কাজ করেন, তার ছিল প্রচণ্ড পিঠে ব্যাথা। নিয়মিত কাজ না করতে পারায়, পরিবারে অভাব অনাটন লেগেই থাকে। এক পর্যায়ে প্রায় অচল হয়ে পড়ে, ছোট ভাইয়ের শিক্ষার কথা মাথায় রেখে, আমি কর্ম জীবনে পদার্পণ করি। দিনে দিনমজুরের কাজ করে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাত্রে নিয়মিত বই পড়তে বসাটা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়তো। এইভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করা সম্ভব হলে ও পরবর্তীতে আর হয় নি। ছোট ভাইয়ের শিক্ষার খরচ বাড়তে থাকায় আর পরিবারের পূর্ণ ব্যায় ভার গ্রহণের কারনে, কাজের সন্ধানে আমাকে শহরে যেতে হয়। তারপর একদিন বিয়ের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে পদার্পণ করি, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। জীবনে কঠিন পরিশ্রমের পরও কখনো দুঃখ অনুভব হয়নি,জাগেনি নিজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার ব্যর্থতা। তবে আনন্দিত হয়েছি যে, আমার ভাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে এখন চাকরি করে, বিয়ে করেছে তার স্ত্রীও চাকরি করে। ভাই চাকরি পাওয়াতে বলেছিল তোমার আর কাজ করতে হবে না, পরিবারের ব্যায় ভার আমি বহন করবো। আর আমি বললাম আমার শক্তি আছে পরিশ্রম করার, তাই নিজ পরিবার সামলে নেবো, তুই বরং নিজের জন্য কিছু কর। বেশ কিছু কাল গত হয়েছে। এখন আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার পড়ছে, আগামীর আশার আলো তার প্রতি দেখছি। আজ আমারও বয়স বেড়েছে, শক্তি কমেছে, পরিবারে অর্থনৈতিক সংকটও দিনের পর দিন বাড়ছে, ভাই আর কোন খোঁজ নেয় না, সে নতুন ঘর বানিয়েছে, গাড়ি নিয়েছে বিলাসিতার জীবন কাটছে তাদের প্রতিনিয়ত। চোখ মুছতে মুছতে বলল আজ আর তাকে কোনো অভিশাপ দেবো না, তার প্রতি আমার আশীর্বাদ রইল, ভালো কাটুক তাদের জীবন, সদা সুখী হওক।
EmoticonEmoticon