পঁচাশিতম জন্মবার্ষিকীটি খুব আড়ম্বরের সাথে উদযাপিত হল। প্রিয়জন বিয়োগের শোকে কিছুটা আহত হলেও অবশেষে, আমার সমবয়সী বন্ধু নিজাম, মনি, সুভাষ আর কনিষ্ঠদের সংবর্ধনা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, আমার আশা হত শুষ্ক প্রাণে জলের সঞ্চার ঘটেছে। জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছা পুনরায় জেগেছে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর একটা ছোট্র ব্যবসা খুলেছিলাম, তা এখন ছেলেরা পরিচালনা করে। একটা সময় ছিল যখন আমি, নাতি নাতনিদের সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটিয়েছি, এখন তারা বড় হয়েছে, স্কুল, টিউশনে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। ছেলেরা ব্যবসা ও অফিস নিয়ে আর বৌমারা সারাদিন রান্নাবান্না ও তাদের সন্তানদের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকে। আর তিনি তো নেই, তাই পড়ন্ত বয়সে আংশিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, গুরুদায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে, একাকীত্বকে আজ বেঁচে নিয়েছি। সমাজ জীবনের যান্ত্রিক ব্যবস্থাককে দুরে ঠেলে, প্রকৃতির মাঝে নিজ অস্তিত্ব আবিষ্কার করার চেষ্ট করছি। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর বাতাস, ফুলের সুবাস, ঝরনা সুমিষ্ট জল, নদীর কলতান, বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ, আর ঐ দিগন্ত আকাশ যেখানে মাটির সাথে মেশে, এই অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে আজ হারিয়েছি। আর একটু একটু করে স্মৃতির মন্থন করছি, শৈশবের সেই দিন গুলির, যেদিন জীবনের প্রথম পরিচয় ঘটেছিল মা'য়ের সাথে, তার অনুপম ভালোবাসা ও স্নেহের পরশে আমার অসহায় মুহূর্ত গুলি অতিবাহিত হয়েছে পরম যত্নে। বাবার আদর ও পরিচর্যা এবং তার একনিষ্ঠার সাথে কর্তব্য পালনে, আমি যোগ্য হয়ে উঠেছিলাম এই পৃথিবীর জীবন যাপনের। তারই প্রচেষ্টায় সুশিক্ষিত হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। বন্ধু সহপাঠীদের সাহচর্যে আমার একাকী মুহূর্ত গুলি হয়ে উঠেছিল আনন্দ পূর্ণ। সামাজিক দায়বদ্ধ বন্ধনের কারনে, পাড়া পড়শির সহযোগী মুলক আচরণে, প্রিয়তমার অকৃত্রিম, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, সুখ ও দুঃখে জীবনের অন্তিম কাল পর্যন্ত অনড়, অবিচল পাশে থেকে, জীবনের গতি দেওয়ার পূর্ণ প্রয়াস, ছেলে এবং বৌমাদের আমার প্রতি নিয়মানুবর্তিতার সাথে যত্ন আর নাতি নাতনিদের প্রাণ ঢালা শ্রদ্ধা আমাকে ভাবিয়েছে। একের পর এক মনে প্রশ্ন জাগছে,
* বাবা ও মা'য়ের প্রতি ঠিকমত সদাচরণ করতে পারলাম তো ?
* বন্ধুবান্ধবের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে পারলাম তো ?
* সামাজিক দায়বদ্ধতা, আমি কতটুকু গ্রহণ করেছি ?
* জীবনসঙ্গিনী, অর্ধাঙ্গিনী আমার স্ত্রীকে কি ঠিকমত ভালোবাসাতে পেরেছি ?
* ছেলে, বৌমা ও তাদের সন্তানদের প্রতি ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি ?
* জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেকে সৎ ও সততার ভিত্তিতে কল্যাণ কামী মানুষদের সাথ কি দিতে পেরেছি ?
* প্রকৃতি থেকে বিশুদ্ধ বাতাস, সুমিষ্ট পানীয়জল গ্রহণ করেছি, আমি কি তার কোনো মূল্য দিতে পেরেছি ?
* সুন্দর অবয়ব এবং সুস্বাস্থ্য নিয়ে প্রকৃতির এই অপরূপ সাজানো সৃষ্টির মাঝে আমি, এর কারিগরকে কি ঠিকমত মূল্যায়ন করতে পেরেছি ?
উত্তরঃ একটাই আমি জানি না।
এমন হাজার প্রশ্ন গুলি বুকের ভিতর জমা হয়ে আছে শুধু উত্তরের অপেক্ষায়।।
1 comments:
Write commentsHi
ReplyEmoticonEmoticon